মোংলা বন্দরের উন্নয়নে চীনের সরাসরি অংশগ্রহণ, ভারতের ভূমিকা কমে গেছে
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলার উন্নয়নে চীন সরাসরি সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছে, যার ফলে ভারত একরকম বাদ পড়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও পরিচালনায় ভারতের ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড (আইপিজিএল) যুক্ত ছিল। তবে গত বছরের আগস্টে হামলার পর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত এই প্রকল্পে নীরব হয়ে পড়ে। বর্তমানে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং চীনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
চীন ও মোংলা বন্দরের উন্নয়ন প্রকল্প
২৫ মার্চ, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের আগে চীনের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসি) একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির আওতায় মোংলা বন্দরের সুবিধা বৃদ্ধি এবং আধুনিকায়ন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দর একটি আধুনিক, স্বয়ংক্রিয় এবং পরিবেশবান্ধব বন্দরে রূপান্তরিত হবে।
চীনা সহায়তায় এই প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে এবং নতুন দুটি কনটেইনার জেটি নির্মাণ করা হবে। এছাড়া, লোডেড ও আনলোডেড কনটেইনারের জন্য অতিরিক্ত জায়গা নির্মাণ করা হবে এবং অন্যান্য আধুনিক সুবিধা সংযোজন করা হবে।
প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমা
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ৪ হাজার ৬৮ কোটি ২২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ভারতের সঙ্গে পূর্ববর্তী চুক্তি
২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় সফরের সময় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারে একটি সম্মতিপত্র সই হয়েছিল। এর পরে ২০১৮ সালে মোংলা বন্দরে ভারতীয় পণ্যের আমদানি-রপ্তানির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২২ সালে ভারতের একটি জাহাজ মোংলা বন্দরে পণ্য খালাস করে, যা পরে স্থলপথে উত্তর-পূর্ব ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
মোংলা বন্দরের ভবিষ্যৎ
মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণে চীনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, "আমরা আমাদের বন্দরের উন্নয়নের জন্য আর অপেক্ষা করতে পারি না। প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে এর উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং আশা করছি এ বছর কাজ শুরু হবে।" তিনি আরও আশা করেন, এই বন্দরের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন পণ্য চীনে রপ্তানি সম্ভব হবে, যা সামগ্রিকভাবে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটাবে।
এছাড়া, এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম আরও সমৃদ্ধ হবে এবং এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
0 মন্তব্যসমূহ